অতিথি
বিভিন্ন কোরাস
১
পৃথিবীতে ঢের দিন বেঁচে থাকে আমাদের আয়ু এখন মৃত্যুর শব্দ শোনে দিনমান। হৃদয়কে চোখ ঠার দিয়ে ঘুমে রেখে হয়তো দুর্যোগে তৃপ্তি পেতে পারে কান; এ রকম একদিন মনে হয়েছিলো; অনেক নিকটে তবু সেই ঘোর ঘনায়েছে আজ; আমাদের উঁচু-নিচু দেয়ালের ভিতরে খোড়লে ততোধিক গুনাগার আপনার কাজ ক'রে যায়;- ঘরের ভিতর থেকে খ'সে গিয়ে সন্তুতির মন বিভীষণ, নৃসিংহের আবেদন পরিপাক ক'রে ভোরের ভিতর থেকে বিকেলের দিকে চ'লে যায়,রাতকে উপেক্ষা ক'রে পুনরায় ভোরে ফিরে আসে;- তবুও তাদের কোনো বাসস্থান নেই, যদিও বিশ্বাসে চোখ বুঁজে ঘর করেছি নির্মাণ ঢের আগে একদিন;- গ্রাসাচ্ছাদন নেই তবুও তাদের, যদিও মাটির দিকে মুখ রেখে পৃথিবীর ধান রুয়ে গেছি একদিন;- অন্যসব জিনিস হারায়ে,সমস্ত চিন্তার দেশ ঘুরে তবু তাহাদের মন আলোকসামন্য ভাবে সুচিন্তাকে অধিকার ক'রে কোথাও সম্মুখে পথ, পশ্চাদ্গমন হারায়েছে- উতরোল নিরবতা আমাদের ঘরে। আমরা তো বহুদিন লক্ষ্য চেয়ে নগরীর পথে হেঁটে গেছি;- কাজ ক'রে চ'লে গেছি অর্থভোগ করে;ভোট দিয়ে মিশে গেছি জনমতামতে। গ্রন্থকে বিশ্বাস ক'রে প'ড়ে গেছি;সহধর্মীদের সাথে জীবনের আখড়াই, সাক্ষরের অক্ষরের কথা মনে ক'রে নিয়ে ঢের পাপ ক'রে, পাপকথা উচ্চারণ ক'রে,তবুও বিশ্বাসভ্রষ্ট হ'য়ে গয়ে জীবনের যৌন একাগ্রতা হারাইনি; তবুও কোথাও কোনো প্রীতি নেই এতদিন পরে। নগরীর রাজপথে মোড়ে-মোড়ে চিহ্ন প'ড়ে আছে;একটি মৃতের দেহ অপরের শবকে জড়ায়ে তবুও আতঙ্কে হিম- হয়তো দ্বিতীয় কোনো মরণের কাছে। আমাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, নারী, হেমন্তের হলুদ ফসল ইতস্তত চ'লে যায় যে যাহার স্বর্গের সন্ধানে;কারু মুখে তবুও দ্বিরুক্তি নেই- পথ নেই ব'লে,যথাস্থান থেকে খ'সে তবুও সকলি যথাস্থানে র'য়ে যায়;- শতাব্দীর শেষ হ'লে এ-রকম আবিষ্ট নিয়ম নেমে আসে;- বিকেলের বারান্দার থেকে সব জীর্ণ নরনারী চেয়ে আছে পড়ন্ত রোদের পারে সূর্যের দিকেঃ খণ্ডহীন মণ্ডলের মতো বেলোয়ারি।
২
নিকটে মরুর মতো মহাদেশ ছড়ায়ে রয়েছেঃ যতদূর চোখ যায়- অনুভব করি; তবু তাকে সমুদ্রের তিতীর্ষু আলোর মতো মনে ক'রে নিয়ে আমাদের জানালায় অনেক মানুষ, চেয়ে আছে দিনমান হেঁয়ালির দিকে। তাদের মুখের পানে চেয়ে মনে হয় হয়তো বা সমুদ্রের সুর শোনে তারা,ভীত মুখশ্রীর সাথে এ-রকম অনন্য বিস্ময় মিশে আছে;- তাহারা অনেক কাল আমাদের দেশে ঘুরে-ফিরে বেড়িয়েছে শারীরিক জিনিসের মতো; পুরুষের পরাজয় দেখে গেছে বাস্তব দৈবের সাথে রণে; হয়তো বস্তুর বল জিতে গেছে প্রজ্ঞাবশত;হয়তো বা দৈবের অজেয় ক্ষমতা- নিজের ক্ষমতা তার এত বেশি ব'লে শুনে গেছে ঢের দিন আমাদের মুখের ভণিতা;তবুও বক্তৃতা শেষ হ'য়ে যায় বেশি করতালি শুরু হ'লে। এরা তাহা জানে সব। আমাদের অন্ধকারে পরিত্যক্ত ক্ষেতের ফসল ঝাড়ে-গোছে অপরূপ হ'য়ে ওঠে তবু বিচিত্র ছবির মায়াবল। ঢের দূরে নগরীর নাভির ভিতরে আজ ভোরে যাহারা কিছুই সৃষ্টি করে নাই তাহাদের অবিকার মন শৃঙ্খলায় জেগে উঠে কাজ করে,- রাত্রে ঘুমায় পরিচিত স্মৃতির মতন। সেই থেকে কলরব, কাড়াকাড়ি, অপমৃত্যু, ভ্রাতৃবিরোধ,অন্ধকার সংসার, ব্যাজস্তুতি, ভয়, নিরাশার জন্ম হয়। সমুদ্রের পরপার থেকে তাই স্মিতচক্ষু নাবিকেরা আসে; ঈশ্বরের চেয়ে স্পর্শময় আক্ষেপে প্রস্তুত হ'য়ে অর্ধনারীশ্বর তরাইয়ের থেকে লুব্ধ বঙ্গোপসাগরে সুকুমার ছায়া ফেলে সূর্যিমামার নাবিকের লিবিডোকে উদ্বোধিত করে।
৩
ঘাসের উপর দিয়ে ভেসে যায় সবুজ বাতাস। অথবা সবুজ বুঝি ঘাস। অথবা নদীর নাম মনে ক'রে নিতে গেলে চারদিকে প্রতিভাত হ'য়ে উঠে নদী দেখা দেয় বিকেল অবধি; অসংখ্য সূর্যের চোখে তরঙ্গের আনন্দে গড়ায়ে ডাইনে আর বাঁয়ে চেয়ে দ্যাখে মানুষের দুঃখ, ক্লান্তি, দীপ্তি, অধঃপতনের সীমা;ঊনিশশো বেয়াল্লিশ সালে ঠেকে পুনরায় নতুন গরিমা পেতে চায় ধোঁয়া, রক্ত, অন্ধ আঁধারের খাত বেয়ে; ঘাসের চেয়েও বেশী মেয়ে; নদীর চেয়েও বেশি ঊনিশশো তেতাল্লিশ, চুয়াল্লিশ উৎক্রান্ত পুরুষের হাল; কামানের ঊর্ধ্বে রৌদ্রে নীলাকাশে অমল মরাল ভারতসাগর ছেড়ে উড়ে যায় অন্য এক সমুদ্রের পানে- মেঘের ফোঁটার মতো স্বচ্ছ, গড়ানে; সুবাতাস কেটে রাত পালকের পাখি তবু; ওরা এলে সহসা রোদের পথে অনন্ত পারুলে ইস্পাতের সূচীমুখ ফুটে ওঠে ওদের কাঁধের 'পরে, নীলিমার তলে; অবশেষে জাগরূক জনসাধারণ আজ চলে? রিরংসা, অন্যায়, রক্ত, উৎকোচ, কানাঘুষো, ভয় চেয়েছে ভাবের ঘরে চুরি বিনে জ্ঞান ও প্রণয়? মহাসাগরের জল কখনো কি সৎবিজ্ঞতার মতো হয়েছিলো স্থির- নিজের জলের ফেনশির নীড়কে কি চিনেছিলো তনুবাত নীলিমার নীচে? না হ'লে উচ্ছল সিন্ধু মিছে? তবুও মিথ্যা নয়ঃ সাগরের বালি পাতালের কালি ঠেলে সময়সুখ্যাত গুণে অন্ধ হ'য়ে, পরে আলোকিত হ'য়ে গেলে। |
Saturday, November 19, 2011
|
Labels:
সাতটি তারার তিমির
|
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
ই বুক
পুরোনো পোস্ট
যে জন্য এই ব্লগ
মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়, তখন জীবনবাবু বড় জাপটে ধরে। মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু জীবনানন্দের জন্যই বেঁচে থাকাটা এত আনন্দের; শুধু জীবনানন্দের জন্য বাংলায় কথা বলা একটা দারুণ ব্যাপার।অন্তর্জালে উনার কবিতার বড় অভাব; সেটা কাটানোই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য। ইচ্ছে আছে জীবনানন্দের সব কবিতা এই ব্লগে জড়ো করব। আশা করা যায় এতে অন্তর্জালে জীবনানন্দ সংগ্রহের দৈন্য ঘুচবে। প্রতিটি কবিতা ঘিরে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি লিপিবদ্ধ করার ইচ্ছাও আছে।
এই ব্লগটা জীবনানন্দ দাশ কে উৎসর্গীকৃত। যদি ব্লগ সম্বন্ধে কারো কোন পরামর্শ থাকে তা নির্দ্বিধায় জানাতে আহবান জানাচ্ছি। rnabiul at gmail.com এই ঠিকানায়।।
এই ব্লগটা জীবনানন্দ দাশ কে উৎসর্গীকৃত। যদি ব্লগ সম্বন্ধে কারো কোন পরামর্শ থাকে তা নির্দ্বিধায় জানাতে আহবান জানাচ্ছি। rnabiul at gmail.com এই ঠিকানায়।।
- 'আকাশলীনা': কবিতাটির আলোচনা
- 'আমাকে তুমি' কে মনে রেখে
- 'আমার এ ছোট মেয়ে': চিত্রনাট্য
- 'একজন মায়াবতী' অথবা 'বনলতা সেন'
- 'এতদিন কোথায় ছিলেন' উপন্যাস নিয়ে
- 'ক্যাম্পে' কবিতাটি নিয়ে আলোচনা
- 'চৌত্রিশ বছর'ঃ উপন্যাস
- 'ফেসবুক' এ জীবনানন্দ দাশ নিয়ে একটি ফ্যানপেইজ
- 'বনলতা সেন' কাব্যগ্রন্থালোচনা
- 'বনলতা সেন' কে মনে রেখে
- অবসরের গানঃ কবিতার আলোচনা
- আনসার ডট কমে জীবনানন্দ দাশ
- আনসার ডট কমে বনলতা সেন
- ইংরেজিতে লেখা কবির একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনী
- একটি কবিতার পঠন
- একশত ভাগ জৈবনিক
- এডওয়ার্ড ডিমক এবং জীবনানন্দ দাশ
- ক্লিনটন বি সিলি'র জীবনবৃত্তান্ত
- জীবনানন্দের আধুনিকতা
- জৈবনিক জীবনানন্দ
- নয়টি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ
- পাঠানুভূতি
- বনলতা সেনের খোঁজে-০১
- বনলতা সেনের খোঁজে-০২
- বনলতা সেনের খোঁজে-০৩
- বনলতা সেনের খোঁজে-০৫
- বরিশাল এবং অন্যান্য
- বরিশালের সেই বাড়িটি
- বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবনানন্দ-আজফার হোসেন
- বাংলা উইকিপিডিয়ায় জীবনানন্দ
- ব্যাক্তি জীবনানন্দ
- মৃত্যু রহস্য-০২
- মৃত্যু রহস্য-০৩
- মৃত্যু রহস্য-০৪
- মৃত্যুরহস্য-০১
- মেরু সমুদ্রের মতো
- যাত্রা অভ্যন্তরে
- রৌদ্রের গন্ধ- ক্লিনটন বি সিলি
0 comments:
Post a Comment