অতিথি

ফুটপাথে

অনেক রাত হয়েছে-অনেক গভীর রাত হয়েছে;
কলকাতার ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে-ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে-
কয়েকটি আদিম সর্পিণী সহোদরার মতো
এই যে ট্র্যামের লাইন ছড়িয়ে আছে
পায়ের তলে, সমস্ত শরীরের রক্তে এদের বিষাক্ত বিস্বাদ স্পর্শ করে হাঁটছি আমি।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে- কেমন যেন ঠাণ্ডা বাতাস;
কোন্‌ দূর সবুজ ঘাসের দেশ নদী জোনাকির কথা মনে পড়ে আমার,-
তারা কোথায় তারা কি হারিয়ে গেছে?
পায়ের তলে লিকলিকে ট্রামের লাইন,-মাথার উপরে অসংখ্য জটিল তারের জাল


শাসন করছে আমাকে।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে- কেমন যেন ঠাণ্ডা বাতাস;
এই ঠাণ্ডা বাতাসের মুখে এই কলকাতার শহরে এই গভীর রাতে
কোনো নীল শিরার বাসাকে কাঁপতে দেখবে না তুমি;
জলপাইয়ের পল্লবে ঘুম ভেঙে গেল বলে কোনো ঘুঘু তার,
কোমল নীলাভ ভাঙা ঘুমের আস্বাদ তোমাকে জানাতে আসবে না।
হলুদ পেঁপের পাতাকে একটা আচমকা পাখি ব’লে ভুল হবে না তোমার,
সৃষ্টিকে গহন কুয়াশা বলে বুঝতে পেলে চোখ নিবিড় হয়ে উঠবে না তোমার
প্যাচাঁ তার ধূসর পাখা আমলকির ডালে ঘসবে না এখানে,
আমলকির শাখা থেকে নীল শিশির ঝ’রে পড়বে না,
তার সুর নক্ষত্রকে লঘু জোনাকির মতো খসিয়ে আনবে না এখানে,
রাত্রিকে নীলাভতম করে তুলবে না!
সবুজ ঘাসের ভিতর অসংখ্য দেয়ালি পোকা ম’রে রয়েছে
দেখতে পাবে না তুমি এখানে,
পৃথিবীকে মৃত সবুজ সুন্দর কোমল একটি দেয়ালি পোকার মতো
মনে হবে না তোমার,
জীবনকে মৃত সবুজ সুন্দর শীতল একটা দেয়ালি পোকার মতো
মনে হবে না;
প্যাঁচার সুর নক্ষত্রকে লঘু জোনাকির মতো খসিয়ে আনবে না এখানে,
শিশিরের সুর নক্ষত্রকে লঘু জোনাকির মতো খসিয়ে আনবে না,
সৃষ্টিকে গহন কুয়াশা বলে বুঝতে পেলে চোখ
নিবিড় হয়ে উঠবে না তোমার।

0 comments:

ই বুক