অতিথি
আট বছর আগের একদিন
শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।
বধূ শুয়ে ছিলো পাশে - শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো - জোৎস্নায়, - তবু সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি !
রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।
'কোনোদিন জাগিবে না আর
জানিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম - অবিরাম ভার
সহিবে না আর - '
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদ ডুবে চলে গেলে - অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো-এক নিস্তব্ধতা এসে।
তবুও তো প্যাঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।
টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারিদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;
মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে।
রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি।
ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন - যেন কোন বিকীর্ণ জীবন
অধিকার করে আছে ইহাদের মন;
দূরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের কাছে
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা - একা;
যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের - মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
এই জেনে।
অশ্বথের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচা এসে
বলেনি কি : 'বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার! -
ধরা যাক দু -একটা ইঁদুর এবার!'
জানায়নি প্যাঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?
জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের -
তোমার অসহ্য বোধ হলো;
মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো
মর্গে - গুমোটে
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে!
শোনো
তবু এ মৃতের গল্প; - কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখে নি কোন খাদ,
সময়ের উর্ধ্বতনে উঠে এসে বধূ
মধু - আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
এ জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের'পরে।
জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ - নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় -
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বথের ডালে বসে এসে,
চোখ পালটায়ে কয় : 'বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার !
ধরা যাক দু - একটা ইঁদুর এবার -'
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজও চমৎকার?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হব - বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব
কালীদহে বেনো জলে পার;
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।
ই বুক
পুরোনো পোস্ট
যে জন্য এই ব্লগ
এই ব্লগটা জীবনানন্দ দাশ কে উৎসর্গীকৃত। যদি ব্লগ সম্বন্ধে কারো কোন পরামর্শ থাকে তা নির্দ্বিধায় জানাতে আহবান জানাচ্ছি। rnabiul at gmail.com এই ঠিকানায়।।
- 'আকাশলীনা': কবিতাটির আলোচনা
- 'আমাকে তুমি' কে মনে রেখে
- 'আমার এ ছোট মেয়ে': চিত্রনাট্য
- 'একজন মায়াবতী' অথবা 'বনলতা সেন'
- 'এতদিন কোথায় ছিলেন' উপন্যাস নিয়ে
- 'ক্যাম্পে' কবিতাটি নিয়ে আলোচনা
- 'চৌত্রিশ বছর'ঃ উপন্যাস
- 'ফেসবুক' এ জীবনানন্দ দাশ নিয়ে একটি ফ্যানপেইজ
- 'বনলতা সেন' কাব্যগ্রন্থালোচনা
- 'বনলতা সেন' কে মনে রেখে
- অবসরের গানঃ কবিতার আলোচনা
- আনসার ডট কমে জীবনানন্দ দাশ
- আনসার ডট কমে বনলতা সেন
- ইংরেজিতে লেখা কবির একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনী
- একটি কবিতার পঠন
- একশত ভাগ জৈবনিক
- এডওয়ার্ড ডিমক এবং জীবনানন্দ দাশ
- ক্লিনটন বি সিলি'র জীবনবৃত্তান্ত
- জীবনানন্দের আধুনিকতা
- জৈবনিক জীবনানন্দ
- নয়টি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ
- পাঠানুভূতি
- বনলতা সেনের খোঁজে-০১
- বনলতা সেনের খোঁজে-০২
- বনলতা সেনের খোঁজে-০৩
- বনলতা সেনের খোঁজে-০৫
- বরিশাল এবং অন্যান্য
- বরিশালের সেই বাড়িটি
- বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবনানন্দ-আজফার হোসেন
- বাংলা উইকিপিডিয়ায় জীবনানন্দ
- ব্যাক্তি জীবনানন্দ
- মৃত্যু রহস্য-০২
- মৃত্যু রহস্য-০৩
- মৃত্যু রহস্য-০৪
- মৃত্যুরহস্য-০১
- মেরু সমুদ্রের মতো
- যাত্রা অভ্যন্তরে
- রৌদ্রের গন্ধ- ক্লিনটন বি সিলি
0 comments:
Post a Comment